- :-:ব্রেকিং নিউজ:-: -

-:-ব্রেকিং নিউজ-:----দৈনিক ঢাকা.২৪ অনলাইন নিউজ পোর্টালে ইউনিয়ন,উপজেলা,পৌরসভা,জেলা,মহানগর,বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রবাসী পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন। তার নাম ও ছবিসহ নিউজ প্রচার করা হবে।। DHAKA.24(দোহার নবাবগঞ্জ এর খবর)****অভিনন্দন নির্মল রঞ্জন গুহ সভাপতি, আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগ। আফজাল বাবু সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী সেচ্ছাসেবকলীগ।

‘অচেনা’ কবি কায়কোবাদ।

MD SHARIFUL...........নবাবগঞ্জঃ জন্মস্থানেই ‘অচেনা’ কবি কায়কোবাদ।

জন্মস্থান ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামেই অবহেলিত মহাকবি কায়কোবাদ। গ্রামে কবির তেমন কোনো স্মৃতিচিহ্ন আর অবশিষ্ট নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। কবির ব্যবহূত কোনো জিনিসপত্র নেই। কবির মৃত্যুর পরপরই পৈতৃক বাড়ির একটি অংশ বিক্রি করা হয়। বাকি অংশ বেদখল হয়ে যাওয়ায় মুছে যেতে চলেছে কবির বংশধরদের পরিচয়।
পৈতৃক বাড়িতে বংশধররা বাস না করলেও কবির আমলের বেশ কয়েকটি বড় আমগাছ রয়েছে, যা দেখলে কবির কথা মনে পড়ে যায়। ২০০৬ সালে জেলা পরিষদের উদ্যোগে কবির বাড়ির সামনের রাস্তাটি কবির নামে নামকরণের পর একটি ফলক নির্মাণ করা হলেও সেটি কে বা কারা ভেঙে ফেলেছে।
১৯৭২ সালে তৎকালিন গণপরিষদের সদস্য জনাব সুবিদ আলী টিপু কায়কোবাদের সম্মানার্থে আগলা গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন কায়কোবাদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে; কিন্তু বিদ্যালয়ের পাঠাগারে কায়কোবাদের লেখা কোনো বই নেই। ফলে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাঁর সম্পর্কে জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা কবি কায়কোবাদ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। তারা এও বলে, তারা কবির গ্রামের ছেলে-মেয়ে; তাই তাঁর সম্পর্কে না জানাটা লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীরা জানায়, মহাকবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী কোনোটাই পালিত হয় না এই বিদ্যালয়ে। ২১ জুলাই কবির  মৃত্যুবার্ষিকী। এটিও জেলা-উপজেলা বা কবির গ্রামে পালিত হয় না বলে জানা গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান মতে, ‘এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি পরিবারের লোকজনের কোনো অবদান নেই। কবির আত্মীয়স্বজন এই বিদ্যালয়ের কল্যাণ সাধনে কখনো এগিয়ে আসেনি।’ জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বাজারে কায়কোবাদের অনেই বই রয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের জানার সুযোগ আছে। কাজেই বিদ্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠানের দরকার নেই।’
এলাকাবাসী জানায়, কবির বাড়ির পশ্চিমে আগলা মাছপাড়ায় ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় কায়কোবাদ যুব ক্লাব ও গণপাঠাগার। জায়গাটি বরাদ্দ দেন স্থানীয় বাবু হরিশ্চন্দ্র পোদ্দার। গত ১০ বছরে পাঠাগারটির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো দর্শনার্থী আগলা গ্রামে গেলে কবি সম্পর্কে কিছুই জানতে পারে না। পাঠাগারটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে বারবার উদ্যোগের কথা বলা হলেও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ঝামেলা থাকায় তা হচ্ছে না।
নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা সদরের চৌরাস্তায় কায়কোবাদের নামে গোলচত্বর নির্মাণ করা হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অজ্ঞাত কারণে তা সরিয়ে ফেলা হয়। পরে সেখানে স্বাধীনতা চত্বর স্থাপন করা হয়। কবির নামে চত্বরটি পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংগঠন।
তৎকালিন নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ মতে, ‘খ্যাতিমান কবি কায়কোবাদের জন্মস্থানে স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য অনেক কিছুই থাকার কথা ছিল। কিন্তু সে রকম কিছুই চোখে পড়েনি নবাবগঞ্জে। চত্বরটি সরানোর বিষয়ে আমার জানা নেই। আলোচনা সাপেক্ষে চত্বরটি নতুন করে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, কবি কায়কোবাদের নামে একটি জাদুঘর করার জন্য শিল্পকলা একাডেমিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই জাদুঘরের কাজ শুরু হবে।
কায়কোবাদরে নাতি টুটুল আলম কোরেশী মতে, বছরে অন্তত দুইবার বাংলাদেশের অনেক কবির জীবনদর্শন সম্পর্কে আলোচনাসভার আয়োজন করা হলেও কায়কোবাদের স্মরণে এ রকম অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না। কবির বাড়িটি দখলমুক্ত করে তাঁর নামে একটি পাঠাগার ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হলে তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে এ অঞ্চলের পাঠক ও অনুরাগীরা।
কায়কোবাদ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আরশাদ আলী মতে ‘কায়কোবাদ আগলা গ্রামে জন্মেছিলেন বলে এ গ্রামের মানুষ শতধন্য। তাঁর নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হলে তাঁর জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে দেশবাসী।’
আধুনিক বাংলা মহাকাব্য ধারার শেষ কবি কায়কোবাদ। তাঁর জন্ম ১৮৫৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, মৃত্যু ১৯৫১ সালের ২১ জুলাই। কায়কোবাদ কবির সাহিত্যিক নাম। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ কাজেম আল কোরেশী। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৮৭০ সালে কায়কোবাদের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বিরহ বিলাপ’ প্রকাশিত হলে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তিনি ছিলেন মূলত গীতিকবি। সনেট, মহাকাব্য, কাহিনীকাব্য, গান রচনায়ও ছিলেন সমান পারদর্শী। মুসলমান কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম মহাকবি উপাধি পান।
১৮৭৩ সালে ‘কুসুম কানন’, ১৮৯৬ সালে ২৩ বছর বয়সে ‘অশ্রুমালা’ প্রকাশিত হলে কায়কোবাদ কাব্যভুবনে হয়ে ওঠেন বরণীয়। দীর্ঘ বিরতির পর মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪) প্রকাশিত হলে তিনি মহাকবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর ‘শিব-মন্দির’ (১৯২১), ‘অমিয় ধারা’ (১৯২৩), ‘শ্মশান-ভস্ম’ (১৯২৪), ‘মহরম শরিফ’ (১৯৩২) প্রকাশিত হয়। কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘প্রেমের ফুল’ (১৯৭০), ‘প্রেমের বাণী’ (১৯৭০), ‘প্রেম-পারিজাত’ (১৯৭০), ‘মন্দাকিনী-ধারা’ (১৯৭০) ও ‘গউছ পাকের প্রেমের কুঞ্জ’ (১৯৭৯)। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির উদ্যোগে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত কায়কোবাদ রচনাবলির চতুর্থ খণ্ড প্রকাশ পায়।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ পত্রিকা।

No comments

Powered by Blogger.